ইয়েমেনের হুথিরা কেন লোহিত সাগরে হামলা চালায়?

 ইয়েমেনের হুথিরা কেন লোহিত সাগরে হামলা চালায়?

 ইয়েমেনের হুথিরা কেন লোহিত সাগরে হামলা চালায়?

-মুহম্মদ ইনজামামুল

যুদ্ধে একসাথে কতগুলো দিকে মনোনিবেশ এবং সক্ষমতা ব্যয় করতে হয় তা হচ্ছে, যুদ্ধের একটা বড় ফ্যাক্টর।  অর্থাৎ কোন দেশ যদি একটি দেশের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তখন দেশটি তার সকল যুদ্ধাস্ত্র এবং সৈন্য সংখ্যা একদিকে ব্যবহার করে।   কিন্তু একই সময় যদি দুই বা তিন দেশের সাথে যুদ্ধ লেগে যায়, তখন এই সামরিক শক্তি দুই বা তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়।  ফলে যুদ্ধে জয়লাভ করা তখন কঠিন হয়ে যায়।  

ফিলিস্তিনের মুক্তকামীদের হামলার প্রতিশোধে ইসরাইলের সেনাবাহিনী কেবল গাজার দিকেই মনোনিবেশ করে ছিলো।   ৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ হিজবুল্লাহর হামলার পর ইসরায়েলী সেনাবাহিনীর একদিকে গাজা আরেক দিকে লেবাননের সাথে মনোনিবেশ করতে হয় এবং লেবাননের সিমান্তেও ইজরায়েলকে প্রচুর যুদ্ধাস্ত্র ও সৈন্য প্রেরণ করতে হয়।  কিন্তু সক্ষমতার দিক থেকে ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর একই সাথে লেবাননে হিজবুল্লাহ’র মতো শক্তিধর বাহিনীর সাথে এবং গাজাতে হামাসের মতো সুরঙ্গ ভিত্তিক গেরিলা যুদ্ধে দক্ষ বাহিনীর সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো যুদ্ধাস্ত্র ও সৈন্যসংখ্যা নেই।   ফলে সহযোগীতার জন্য ইজরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের দারস্ত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র তখন বলে যে, ‍যদি হিজবুল্লাহ স্থলপথে ইজরায়েলে আক্রমণ করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ইজরায়েলের পক্ষে যুদ্ধে করতে আসবে।  যার জন্য হিজবুল্লাহ স্থলপথে হামলা করা থেকে বিরত থাকে। 

কারণ, ‍যুক্তরাষ্ট্র লেবাননে হামলা করলে তা প্রতিহত করা হিজবুল্লাহ’র জন্য যেমন সামরিকভাবে কঠিন হয়ে যাবে, তেমন জনসমর্থনও ধরে রাখাটা হিজবুল্লাহ’র জন্য কঠিন হয়ে যাবে।  কেননা, শুধু দক্ষিণ লেবাননেই হিজবুল্লাহ’র আধিপত্য আছে।  কিন্তু উত্তর লেবাননে অনেক গ্রুপ হিজবুল্লাহ বিরোধী।  যারা লেবাননে ইসরাইলের হামলার  ব্যাপারে চুপ থাকলেও মার্কিনিদের হামলার মুখে তারা হিজবুল্লাহর উপর অনেক চাপ সৃষ্টি করবে, বলবে- হিজবুল্লাহ’র কার্যক্রমের কারণে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উপর হামলা করছে।  ফলে বিরোধী গ্রুপগুলো সাধারণ জনগণকে হিজবুল্লাহ’র বিরুদ্ধে আরো উস্কে দিবে এবং অনেকে মার্কিনিদের পক্ষ অবলম্বনও করবে।  এজন্য ইয়েমেনের হুথিরা লোহিত সাগরে হামলা চালিয়ে আমেরিকাকে ইয়েমেনের দিকে ব্যস্ত রাখতে চায়।  এমনকি হুথিরা চায় আমেরিকা ইয়েমেনে সৈন্য পাঠাক।  কারণ ইয়েমেন আফগানিস্তানের চেয়েও দূর্গম।  এসব দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় হুথিদের সাথে আমেরিকা পেরে উঠবে না।  আর ইয়েমেনে এবং লেবাননে যুক্তরাষ্ট্র একসাথে যুদ্ধ চালাতে পারবে না।  কারণ আমেরিকা ইউক্রেন যুদ্ধে আর্থিক ভাবে যুক্ত থাকায় আমেরিকার জন্য একসাথে এতগুলো জায়গায় যুদ্ধ চালানো কঠিন হবে ।  যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে-  আইআরজিসি'র পলিসি হলো, লেবানন এবং সিরিয়ায় ইজরায়েলকে ব্যাস্ত রাখবে যাতে ইজরায়েল গাজাতে ব্যাপকভাবে হামলা করতে না পারে এবং ইয়েমেন ও ইরাকে আমেরিকাকে ব্যস্ত রাখা যাতে লেবানন এবং সিরিয়াতে আমেরিকা ব্যাপকভাবে হামলা করতে না পারে।

মূলতঃ হুথিদের লোহিত সাগরে হামলার ফলে আমেরিকা এখন পুরোপুরি মনোযোগ ইসরায়েলকে দিতে পারছে না।  আর আমেরিকা ইজরায়েলকে যত কম মনোনিবেশ করতে পারবে হিজবুল্লাহ ততবেশি ইজরায়েলে হামলা করতে পারবে।

 

Comments